আভিধানিক অর্থে রুকইয়াহ মানে ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র, সম্মোহন, জাদু, তাবীজ, কবচ ইত্যাদি। ব্যবহারিক অর্থে রুকইয়াহ শব্দটি দ্বারা সাধারণত ঝাড়ফুঁক বোঝানো হয়। মন্ত্র বোঝাতেও আরবীতে রুকইয়াহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। মন্ত্র মানে বিশেষ কিছু অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করা। যেমন: এমন কিছু আবৃত্তি করে ফুঁ দেওয়া, যার ফলে বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর মধ্যে শরঈ ঝাড়ফুক যেমন অন্তর্ভুক্ত, তেমনি কুফরী জাদুবিদ্যার মন্ত্রপাঠও অন্তর্ভুক্ত।
শরীয়াহর পরিভাষায় রুকইয়াহ শব্দটি একটু ভিন্নমাত্রায় ব্যবহার করা হয়। কোনো ব্যক্তি যখন কুরআনের আয়াত, দুআ কিংবা আল্লাহ তাআলার কোনো নাম বা সিফাত বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে-যেমন: নিজের বা অন্যের সুস্থতার জন্য, কিংবা অন্য কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য-একমাত্র আল্লাহর সাহায্য চেয়ে পাঠ করে, পরিভাষায় সেটাকে ‘রুকইয়াহ’ বলা হয়। উল্লেখ্য, রুকইয়াহ শারইয়্যাহ-এর সংজ্ঞাও এটাই।
কেন এই রুকইয়াহ?
শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক রোগের জন্য রুকইয়াহ করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে সেই রোগের চিকিৎসা থাকুক কিংবা না থাকুক, সর্বাবস্থায় যেকোনো রোগের জন্য রুকইয়াহ করা যায়। রুকইয়াহ মনের আশা পূরণের জন্য কোনো জাদুমন্ত্র নয়। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার জন্য কিংবা দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য এটা কোনো তদবীর নয়। রুকইয়াহ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা বা ব্যবসায় উন্নতি করার ওযীফাও নয়। বরং এটা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি মাত্র, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করা হয়।
রুকইয়াহ শারইয়্যাহর গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই রুকইয়াহ নিয়ে আলোচনার কী দরকার? এর পেছনে এতো সময়, পরিশ্রম আর মেধা ব্যয় করার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী? আর এতে লাভটাই বা কী?
- আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত করা, সমাজ থেকে কুফরী জাদু- ফিতনা নির্মূল করা, কবিরাজ নামের শয়তান জাদুকরদের থেকে উম্মাতকে দূরে রাখা এবং প্রায় ভুলে যাওয়া রুকইয়াহ শারইয়্যাহর সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করা। আর অবশ্যই এসবেরপেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের রবের সন্তুষ্টি অর্জন!
এখানে ইবনুল কায়্যিম রহ.-এর কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেন-
‘আল কুরআন হচ্ছে পরিপূর্ণ চিকিৎসা। মানসিক কিংবা শারীরিক; দুনিয়ার কিংবা আখিরাতের যাবতীয় রোগব্যাধির জন্য কুরআনে রয়েছে পরিপূর্ণ আরোগ্য।
তবে এ থেকে নিরাময় লাভের তাওফীক সবাইকে দেওয়া হয় না; সবাই এর উপযুক্তও নয়। রোগী সততা, আস্থা, পূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা, অকাট্য বিশ্বাস এবং চিকিৎসার যাবতীয় শর্ত পূরণের মাধ্যমে যদি এই কুরআনকে কেউ তার রোগের ওপর উত্তমভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে কোন ব্যাধিই এর মোকাবিলা করতে পারবে না। কীভাবে রোগ-ব্যাধি আসমান- জমিনের মালিকের ওই কথার মোকাবিলা করবে, যা তিনি পাহাড়ের ওপর নাজিল করলে তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলত, ভূমির উপর নাজিল করলে ভূমিকে বিদীর্ণ করে দিত! সুতরাং শরীর ও মনের এমন কোনো রোগ নেই, যার চিকিৎসা আল-কুরআনে নেই। উপরম্ভ এর প্রতিকার এবং তা থেকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। যাকে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবের বুঝ দান করেছেন, সেই কেবল এ থেকে সার্বিক সুস্থতা লাভ করে ধন্য হয়। কুরআন যাকে নিরাময় করবে না, আল্লাহও তাকে নিরাময় করবেন না। আর কুরআন যার জন্য যথেষ্ট নয়, আল্লাহও তার জন্য যথেষ্ট হবেন না।‘
রুকইয়াহ সংক্রান্ত কিছু পরিভাষা
সেলফ রুকইয়াহ: প্রফেশনাল কোন রাঝির সহায়তা ছাড়া নিজেই নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য রুকইয়াহ করা।
রাক্কী: যিনি অন্যের ওপর রুকইয়াহ করেন।
আয়াতুল কুরসি: সূরা বাকারার ২৫৫নং আয়াত।
আয়াতুল হারক: জাহান্নাম, আজাব এবং গজব সংক্রান্ত আয়াত।
আয়াতুশ শিফা: যেসব আয়াতে সুস্থতার কথা বলা হয়েছে। প্রসিদ্ধ আয়াতে শিফা ৬টি।
যথা: সূরা তাওবাহ ১৪, সূরা ইউনুস ৫৭, সূরা নাহল ৬৯. সূরা বনি ইসরাইল ৮২, সূরা
‘শুআরা ৮০, সূরা হা-মীম সাজদা ৪৪ নং আয়াত।
তিন কুল: সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস।
চার কুল: সূরা কাফিরুন এবং তিনকুল।
আট সূরা: সূরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জিন, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস।